মনতোষ বেদজ্ঞ :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার জেলার চার সংসদীয় আসনে ২৯ প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনই জামানত হারাচ্ছেন। এ তালিকায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সাংসদ ও কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হামিদুর রহমান আজাদ এবং একই আসনের বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী, সাবেক সাংসদ আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদও রয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষনা করা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।
আইন অনুসারে, কোন প্রার্থী তাঁর আসনে ভোটারদের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগেরও কম ভোট পেলে তিনি জামানত ফেরত পান না। জামানতের সেই অর্থ জমা হবে সরকারি কোষাগারে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে এবারই আওয়ামী লীগের প্রথম প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের জাফর আলম। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হাসিনা আহমেদ পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৬০১ ভোট। এ আসনের ১৩৯ ভোটকেন্দ্রে এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪১ জন। সে হিসেবে প্রার্থীদের জামানত ফেরত পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৪২ হাজার ৪২ ভোট প্রয়োজন ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী ছাড়া আর কেউ এত ভোট পাননি। তাই জামানত হারাচ্ছেন ৬ জন প্রার্থী। তারা হলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহাম্মদ আলী আছগর (৫২২ ভোট), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (৪২৫ ভোট), স্বতন্ত্র প্রার্থী তানিয়া আফরিন (২১৮ ভোট), বদিউল আলম (৮৯ ভোট), মুসলিম লীগের মুহাম্মদ ফয়সল (৭০ ভোট), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২৩১ ভোট)।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ইতিহাসের রেকর্ড ব্যবধানের বিজয়ী হয়েছেন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের বতর্মান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৯১ ভোট। এ আসনে ১০৫ ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭২১ জন। সে হিসেবে প্রার্থীদের জামানত ফেরত পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে ৩১ হাজার ৯০ ভোট। আশেক উল্লাহ রফিক ছাড়া অন্য ৯ প্রার্থীর কেউ এত ভোট পাননি। তাই জামানত হারাচ্ছেন এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সাংসদ ও হামিদুর রহমান আজাদ (১৮ হাজার ৫৮৭ ভোট) এবং একই আসনের বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী, সাবেক সাংসদ আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ (১১ হাজার ৭৮৯ ভোট), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল (১ হাজার ৬৩০ ভোট), গনফ্রন্টের প্রার্থী ড. আনসারুল করিম (২৯৫ ভোট), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবু ইউসুফ মুহাম্মদ মনজুর আহমদ (১৪৭ ভোট), মুসলিম লীগের মোঃ শহীদুল্লাহ (৫২০ ভোট), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (৭১ ভোট) ও বিকল্প ধারার শাহেদ সরওয়ার (৩৭৯ ভোট), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুহিবুল্লাহ (৮৭ ভোট)।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৫৩ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল পেয়েছেন ৮৬ হাজার ৭১৮ ভোট। এ আসনের ১৬৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭৯ জন। সে হিসেবে প্রার্থীদের জামানত ফেরত পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ৪৩ হাজার ৩৭২ ভোটের। কিন্তু এ আসনের অন্য তিন প্রার্থীর কেউ এর কাছাকাছি ভোটও পাননি। তাই জামানত হারাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ আমিন (১ হাজার ১৬৯ ভোট), জাতীয় পার্টির মফিজুর রহমান (২৮৪ ভোট) ও বিএনএফের মোঃ হাছন (২৬৩ ভোট)।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহিন আকতারের কাছে রীতিমত ধরাশায়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী। শাহীন আকতার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৭ হাজার ১৮ ভোট। এ আসনে একশ’টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৮ জন। সে হিসেবে জামানত ফেরত পাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে ২৯ হাজার ৭৩৩ ভোটের। এ আসনেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থী ছাড়া অন্য ৪ প্রার্থীর কেউ এর কাছাকাছি ভোটও পাননি। তাই জামানত হারাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শোয়াইব (১ হাজার ৫১২ ভোট), ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল হোছাইন (২১৮ ভোট), জাতীয় পার্টির আবুল মঞ্জুর (১৮১ ভোট) ও মুসলিম লীগের সাইফুদ্দিন খালেদ (৬৮ ভোট)।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-